শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ঝগড়া-বিবাদ সর্বনাশা কাজ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:

হজরত আবু উমামা বাহেলি রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেওয়ার জন্য জামিন, যে কলহ-বিবাদ পরিত্যাগ করে। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেওয়ার জন্য জামিন, যে মিথ্যা পরিহার করে; এমনকি হাসি-ঠাট্টার ছলেও। আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চ মঞ্জিলে নিয়ে দেওয়ার জন্য জিম্মাদার, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে।’ সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০

‘জান্নাত’ চিরশান্তির স্থান। মানুষ ও জিনদের অন্তহীন চাওয়া-পাওয়া, পরম সুখ-শান্তি এবং ভোগ-বিলাসের অকল্পনীয় পূর্ণতা লাভের একমাত্র স্থান। এর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। জান্নাত বলতে এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহতায়ালা তার অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে-ফলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা-সংবলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে প্রবহমান বিভিন্ন ধরনের নদীনালা ও ঝরনাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য (এমন নিয়ামত) প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না।’ সহিহ বোখারি

আল্লাহতায়ালা জান্নাতের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে ‘আর যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের সুসংবাদ প্রদান করো যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার নিম্নদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। যখনই তা থেকে তাদের রিজিক হিসেবে ফলসমূহ দেওয়া হবে। তখন তারা বলবে এটা তো আগেই আমরা পেয়েছিলাম এবং তাদের এর দ্বারা ওর সদৃশ দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য এর মধ্যে পবিত্র সহধর্মিণী থাকবে এবং সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।’ সুরা বাকারা : ২৫

জান্নাত হলো প্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা এবং প্রতিযোগীদের সর্বাধিক প্রতিযোগিতার বিষয়। সফলকাম সে যে জান্নাত লাভের জন্য সচেষ্ট হয়। ভাগ্যবান সে যে তা অর্জনের জন্য অধিক পরিমাণে নেক আমল করে। জান্নাত অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ, তা অর্জন করা শুধু তার জন্যই সহজ হয়, যার জন্য ঐশীভাবে বিষয়টি সহজ করা হয়। জান্নাত আল্লাহতায়ালা মুমিন বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন। বর্ণিত হাদিসে সেসব লোকের জন্য জান্নাতের শুভসংবাদ দেওয়া হয়েছে, যারা তিনটি গুণের যেকোনো একটি দ্বারা অলংকৃত হয়েছে।

হাদিসে স্পষ্টভাবে অনর্থক কলহ-বিবাদ থেকে দূরে থাকা ব্যক্তির জন্য জান্নাতের ভেতরে বাড়ি বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। কেননা কলহ-বিবাদ মানুষকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য ও পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ফলে তাকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে অক্ষম করে দেয়। সুতরাং, প্রকৃত মুসলমান সব ধরনের কলহ-বিবাদ পরিহার করে চলে। আবার ঝগড়া-বিবাদে গালাগাল করা নিকৃষ্ট স্বভাবের কাজ। মূলত মুনাফিক ব্যক্তিই অন্যের সঙ্গে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হলে মুখ খারাপ করে এবং অবলীলায় অশ্রাব্য গালমন্দ শুরু করে দেয়। যাপিত জীবনে কত ধরনের মানুষের সঙ্গেই মেলামেশা ও লেনদেন করতে হয়। এতে কখনো কখনো মতের অমিল দেখা দেয় এবং মাঝেমধ্যে তা কলহ-বিবাদে পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু একজন প্রকৃত মুমিন কোনো অবস্থাতেই মুখ খারাপ করতে পারে না। সব সময় সে নিজ ভদ্রতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ব্যাপারে সচেতন থাকবে। দৃষ্টিভঙ্গিগত মতভেদ হোক, চিন্তা-চেতনার অমিল হোক, রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক বিরোধ হোক, কোনো অবস্থাতেই একজন মুমিন তার মুখ দিয়ে মন্দ বাক্য উচ্চারণ করবে না। কোরআন-হাদিসে ঝগড়া-বিবাদে জড়িত লোকদের মধ্যে আপস-মীমাংসা বিধানে সহযোগীদের উচ্চমর্যাদা এবং প্রতিদান প্রদানে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের অধিকাংশ শলাপরামর্শ ভালো নয়; কিন্তু যে শলাপরামর্শ দান-সহযোগিতা করতে কিংবা সৎকাজ করতে অথবা মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক বা সন্ধি স্থাপনে করে তা স্বতন্ত্র। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে এ কাজ করে, আমি তাকে বিরাট প্রতিদান দেব।’ সুরা আন নিসা : ১১৪

হাদিসে নবী করিম (সা.) বিবাদ মীমাংসাকারীর জন্য ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ ও দান-সহযোগিতার চেয়ে উত্তম কাজের সংবাদ দেব না? তারা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলো মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসা করা। মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা মারাত্মক সর্বনাশা কাজ।’ সুনানে তিরমিজি ও আবু দাউদ

আল্লাহতায়ালা বান্দাদের ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। কারণ, ঝগড়া-বিবাদ মানুষের অনেক ক্ষতির কারণ হয় এবং অনিষ্টতা সৃষ্টি করে। আল্লামা আওযায়ি (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা যখন কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি কামনা করেন, তখন তাদের ওপর ঝগড়া-বিবাদ চাপিয়ে দেন এবং তাদের কাজ থেকে বিরত রাখেন। মুয়াবিয়া ইবনে কুরাহ (রহ.) বলেন, ‘তোমরা ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেঁচে থাকো! কারণ, তা তোমাদের আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেয়।’

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘ঝগড়া-বিবাদ করা মানুষের অন্তরকে কঠিন করে দেয় এবং পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা তৈরি করে।’ অনেক মানুষ আছে শুধু (যেকোনো) বৈঠকে বিতর্ক করার কারণে তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। যার কারণে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে না, একজন অপরজনকে দেখতে যায় না। এ কারণে মনীষীরা বিতর্ক করা থেকে সতর্ক করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তোমার জুলুমের জন্য তুমি ঝগড়াটে হওয়াই যথেষ্ট। আর তোমার গুনাহের জন্য তুমি বিবাদকারী হওয়াই যথেষ্ট।’ মুহাম্মদ ইবন আলি ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, ‘ঝগড়া দীনকে মিটিয়ে দেয়, মানুষের অন্তরে বিদ্বেষ জন্মায়।’

আবদুল্লাহ ইবনে হাসান (রা.) বলেন, ‘বিবাদ প্রাচীন বন্ধুত্বকে ধ্বংস করে, সুদৃঢ় বন্ধনকে খুলে দেয়, কমপক্ষে তার চড়াও হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে, যা হলো সম্পর্কচ্ছেদের সবচেয়ে মজবুত উপায়।’

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION